Header Ads

Logo Design by FlamingText.comLogo Design by FlamingText.com

 নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিভঙ্গ বিশ্বনবীর সতর্কবার্তা

শায়খ আহমাদুল্লাহ                                             কালের কণ্ঠ                                                         ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ 


ওয়াদারক্ষা বা কথা দিয়ে কথা রাখা প্রশংসনীয় চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে প্রতিশ্রুতি পূরণের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ নিজে ওয়াদা খেলাফ করেন না। নবী-রাসুলরা সর্বদা প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেন। প্রতিশ্রুতি পূরণকে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পক্ষান্তরে ওয়াদাভঙ্গ মুনাফিকের লক্ষণ। বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। মিথ্যা কথা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানতের খিয়ানত করা।’ ওয়াদাভঙ্গ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে তোমরা এমন কথা বলো, যা করো না।’ (সুরা : সফ, আয়াত : ৩) ওয়াদাভঙ্গকারী ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন থাকবে সবচেয়ে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.)  ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন সব প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারীর নিতম্বে একটি পতাকা বাঁধা থাকবে। তাতে লেখা থাকবে—এটা অমুকের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ (করার নিশানা)।’ (জামেউস সাগির)
ইসলামে শত্রু-মিত্র, মুসলিম-অমুসলিম সবার সঙ্গে ওয়াদা রক্ষার ব্যপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় একাধিক ঘটনা পাওয়া যায়, তিনি যুদ্ধরত প্রতিপক্ষ কিংবা অমুসলিমের সঙ্গেও কৃত ওয়াদা রক্ষায় তৎপর ছিলেন। ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হুদায়বিয়ার চুক্তি অনুযায়ী মক্কার কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে মদিনায় চলে এলে তাকে আবার মক্কার অমুসলিমদের হাতে সোপর্দ করার কথা ছিল। রাসুল (সা.) শত মনোবেদনা সত্ত্বেও শুধু প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে নওমুসলিমদের মক্কায় ফেরত পাঠাতেন। তবু প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করতেন না। সুতরাং যদি কেউ কাউকে স্বেচ্ছায় এমন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, যা সরাসরি কোরআন-সুন্নাহবিরোধী না হয়, তাহলে সেটা পূরণ করা তার কর্তব্য। তবে কৃত অঙ্গীকার যদি কোনো শর্তসাপেক্ষ হয় এবং সেই শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে সেই অঙ্গীকার পালন করা বাধ্যতামূলক নয়। যেমন—কোনো জনপ্রতিনিধি বললেন, যদি তিনি নির্বাচিত হন, তাহলে অমুক অমুক কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত না হলে তাঁর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করা আর আবশ্যক থাকে না। অথবা দ্বিপক্ষীয় কোনো অঙ্গীকারের বেলায় কোনো একপক্ষ অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে অন্য পক্ষের জন্য তার কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার নৈতিক অধিকার থাকে। তবে ব্যক্তিগত অঙ্গীকার আর জনপ্রতিনিধি কতৃক জনগণের সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এক নয়। একজন জনপ্রতিনিধি যদি তাঁর জনগণকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে তার অর্থ হলো—জনগণের সংখ্যানুপাতে সবাইকে তিনি স্বতন্ত্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুতরাং তার ওয়াদাভঙ্গ অনেক বড় অপরাধ। যেমন—একজন নেতা যদি এক লাখ লোকের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং অঙ্গীকার করেন যে তিনি নির্বাচিত হলে তাদের জন্য অমুক অমুক কাজ করবেন। কিন্তু কার্যত তিনি নির্বাচিত হয়ে তা করেননি। তাহলে তার অর্থ দাঁড়ায়, তিনি এক লাখ ওয়াদা ভঙ্গ করলেন!
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন সব প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারীর (নিতম্বে ওয়াদাভঙ্গের অপরাধসংবলিত) পতাকা স্থাপন করা থাকবে এবং তা প্রতিশ্রুতিভঙ্গের পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। আর মনে রাখবে, সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিদের চেয়ে বড় প্রতিশ্রুতিভঙ্গকারী আর কেউ নেই।’  গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা সাধারণ জনগণের সঙ্গে নানা অঙ্গীকার করে থাকেন এবং নির্বাচিত হলে সেসব পূরণের আশ্বাস দেন। অথচ বাস্তবে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিই নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণে সচেষ্ট থাকেন না। তাঁদের জন্য উপরোল্লিখিত হাদিসে বিশেষ সতর্কবাণী রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব অঙ্গীকারভঙ্গ শুধু অঙ্গীকারভঙ্গের অপরাধেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তাতে প্রতারণার মতো জঘন্য অপরাধও যুক্ত হয়। আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের প্রতারণা আর লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে কৃত প্রতারণার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, তা বলাই বাহুল্য।
লেখক : খতিব, ভূমিপল্লী আবাসন, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.