রাসূল (সা) এর সুন্নাত-২
সুন্নাতের পক্ষে
কুরআনের বাইরে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সকল শিক্ষাই সুন্নাত
সুন্নাত বলতে হাদীস শরীফে অনেক সময় কুরআন কারীমের অতিরিক্ত রাসূলুল্লাহﷺ -এর সকল শিক্ষাকে বুঝানো হয়েছে। কুরআনের বর্ণনায়, কুরআনের ব্যাখ্যায় বা আল্লাহর নির্দেশাবলির বর্ণনায় তাঁর সকল কথা, কাজ ও অনুমোদনকে সুন্নাত বলা হয়, ফিকহের পরিভাষায় তা ফরয বা নফল হতে পারে। মুয়ায ইবনু জাবাল (রা.) এর কতিপয় ছাত্র বলেন :إنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ لَمَّا أَرَادَ أَنْ يَبْعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ قَالَ كَيْفَ تَقْضِي إِذَا عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ قَالَ أَقْضِي بِكِتَابِ اللَّهِ قَالَ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي كِتَابِ اللَّهِ قَالَ فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، قَالَ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَلا فِي كِتَابِ اللَّه؟ِ قَالَ أَجْتَهِدُ رَأْيِي وَلا آلُو. فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ صَدْرَهُ وَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ لِمَا يُرْضِي رَسُولَ اللَّهِ.
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মুয়াযকে ইয়ামানের শাসক নিযুক্ত করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন জিজ্ঞাসা করলেন : যদি তোমার কাছে কোনো বিচারের দায়িত্ব আসে তাহলে কীভাবে বিচার করবে? মুয়ায বলেন : আমি আল্লাহর কিতাব দ্বারা বিচার করব। তিনি প্রশ্ন করেন : যদি আল্লাহর কিতাবে (তোমার কেসের কোনো বিধান) না পাও? মুয়ায বলেন : তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সুন্নাত দ্বারা (বিচার করব)। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন : যদি আল্লাহর কিতাবে বা রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সুন্নাতের মধ্যে (তোমার নির্দিষ্ট কেসের কোনো বিধান) না পাও? মুয়ায বলেন : তাহলে আমি সর্বাত্মকভাবে আমার বুদ্ধিমত্তা ও মেধা প্রয়োগ করে ফয়সালা প্রদানের চেষ্টা করব। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর বুকে থাবা দিয়ে বলেন : “আল-হামদু লিল্লাহ, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর প্রতিনিধিকে তৌফিক প্রদান করেছেন এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যা রাসূলুল্লাহ ﷺ পছন্দ করেন।”
আবু বকর সিদ্দীক (রা.) “সুন্নাত” বলতে এই অর্থ বুঝিয়েছেন। এক মৃতব্যক্তির দাদি এসে আবু বকর (রা.)-এর কাছে মীরাস দাবি করে। তিনি বলেন:
مَا لَكِ فِي كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى شَيْءٌ وَمَا عَلِمْتُ لَكِ فِي سُنَّةِ نَبِيِّ اللَّهِ ﷺ شَيْئًا فَارْجِعِي حَتَّى أَسْأَلَ النَّاسَ
“আল্লাহর কিতাবে তোমার কোনো অংশ বর্ণিত নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সুন্নাতেও আমার জানা মতে তোমার জন্য কোনো বিধান নেই। তুমি পরে এস, আমি সবাইকে জিজ্ঞাসা করে দেখি।”
তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করলে মুগীরা ইবনু শু’বা (রা.) বলেন : আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাদিকে ছয় ভাগের এক ভাগ মীরাস দিয়েছেন। আবু বকর (রা) বলেন : আপনার সাথে আর কেউ আছেন কি যিনি এই হাদীস জানেন? তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রা.) উঠে মুগীরা ইবনু শু’বা (রা.) যা বলেছেন তাই বললেন। তখন আবু বকর (রা.) দাদিকে উক্ত মীরাস প্রদান করেন।”
অন্য হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, উমর (রা.) তার নিযুক্ত কুফার বিচারক কাযী শুরাইহকে বিচারের নীতি-পদ্ধতি জানিয়ে লিখেন:
اقْضِ بِمَا فِي كِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَلا فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَاقْضِ بِمَا قَضَى بِهِ الصَّالِحُونَ
“আল্লাহর কিতাব অনুসারে বিচার করবে, আল্লাহর কিতাবে না থাকলে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সুন্নাত অনুসারে। যদি আল্লাহর কিতাবে বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের মধ্যে (তোমার নির্দিষ্ট কেসের কোনো বিধান) না থাকে তাহলে (তোমার পূর্ববর্তী) সৎ ন্যায়পরায়ণ বিচারকগণের বিচারের আলোকে বিচার করবে।...”
এখানে উমর (রা.) কুরআনের বাইরে রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সকল প্রকারের কর্মকাণ্ডকে ‘সুন্নাত’ বলেছেন।
No comments